খুলনার স্থানীয় দেশ সংযোগ পত্রিকা কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় খুলনা সদর থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে পত্রিকাটির সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম বাদী হয়ে মামলা করেন। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত হামলার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল বেলা সোয়া একটার দিকে চাপাতি ও লম্বা ছোরা নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।
আজ খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত।খুলনা নগরের সিমেন্ট্রি সড়কে (ফুলমার্কেটের পাশে) অবস্থিত দেশ সংযোগ কার্যালয়। হামলার সময় কার্যালয়ে ছিলেন পত্রিকাটির স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, হঠাৎ হট্টগোল শুনে বাইরে আসেন। এ সময় তাঁকে দেখে ধাওয়া দেন চাপাতি হাতে থাকা সন্ত্রাসীরা। ভয়ে তিনি ভেতরে চলে যান। সবার হাতে চাপাতি ও লম্বা ছোরা ছিল।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, পাঁচ থেকে ছয় যুবক হেলমেট ও মুখে কাপড় বেঁধে হাতে চাপাতি ও লম্বা ছোরা নিয়ে ওই পত্রিকার কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন। এ সময় তাঁরা পত্রিকা অফিসের সামনের জানালা ভাঙচুর করে চলে যান। প্রধান সড়কের সামনের আরেকটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চারটি মোটরসাইকেলে ওই সন্ত্রাসীরা এসে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ান। এরপর পেছনে থাকা ব্যক্তিরা নেমে হাতে চাপাতি ও ছোরা নিয়ে হামলা করতে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্যরা। সর্বোচ্চ দুই মিনিটের মধ্যে হামলা চালিয়ে আবার মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান তাঁরা।
গত ১৪ এপ্রিল খুলনা নগরের জুয়া, মাদকসহ নানা অপরাধের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল পত্রিকাটি। পরদিন চার থেকে পাঁচজন অপরিচিত যুবক ওই পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলমকে গালাগালি করেন ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় খুলনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন সম্পাদক। এরপর গতকাল ওই হামলা হলো।
পত্রিকাটির সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সংবাদ প্রকাশ করার জন্যই এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছি। হয়তো সামনে পেলে কুপিয়ে মেরে ফেলত ওই সন্ত্রাসীরা।’ তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ ঘটনার পরপরই মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। পত্রিকা যেকোনো খবর প্রকাশ করতেই পারে, তাই বলে কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় সন্ত্রাসীদের হাতে বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এ কারণেই সন্ত্রাসীরা অন্য কোনো পত্রিকা বা সাংবাদিকের ওপর হামলা করার সাহস পাচ্ছেন। কোনো সংবাদপত্রের ওপর হামলা মানেই গণমাধ্যমকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিস্তব্ধ করার চেষ্টা করা। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।


0 Comments